- ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ' এই প্রবাদ বাক্যটি সবারই জানা। এই প্রবাদ বাক্যটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে। সৎ বন্ধু ও ভালো সঙ্গী নির্বাচন করার ব্যাপারে সাহাবায়ে আজমাইনদের ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করতেন নবিজি (সা.)।
মানব জীবনের একটি অপরিহার্য বিষয় হলো একাধিক ব্যক্তিকে সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করা।
বন্ধু বা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করে এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তার রাসুল ও মুমিনরা, যারা নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। (সুরা আল মায়েদা: ৫৫)
ইরানি এক কবি বলেছেন, অসৎ বন্ধু থেকে দূরে থাকো, কেননা সে বিষাক্ত সাপ থেকেও ভয়ংকর। বিষাক্ত সাপ কেবল তোমার জীবনের ক্ষতি করবে কিন্তু অসৎ বন্ধু তোমার জীবনের সাথে সাথে তোমার ঈমানও শেষ করে দিবে। তাই ইসলাম ধর্মে অসৎ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য ব্যাপক তাগিদ দেয়া হয়েছে।
অনেকেই বলতে পারেন, ‘কেউ অসৎ হলে আমাদের সমস্যা কোথায়? আমরা আমাদের মতো চলব।’
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষ ইচ্ছে করলেই বন্ধুর প্রভাব মুক্ত থাকতে পারে না। অসৎ বন্ধুর গুণ অন্য বন্ধুকে প্রভাবিত করবেই।
আমিরুল মোমেনীন ইমাম আলী (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যদি ভালো লোক খারাপ লোকের সাথে উঠাবসা করে তাহলে তার মাথায়ও খারাপ চিন্তা চলে আসে।’
ইমাম জাওয়াদ এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘খারাপ বন্ধুর সাথে চলাফেরা করো না। কারণ সে খোলা তলোয়ারের মত, যার বাইরের চেহারা সূন্দর কিন্তু ফলাফল খুবই বিপজ্জনক।’
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, 'ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীনের মাধ্যমেই পরিচিত। তাই কাকে বন্ধু গ্রহণ করছ তা দেখা চাই।' (আবু দাউদ ও তিরমিজি)
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে কারও সঙ্গে মেশার ক্ষেত্রে একটু চিন্তাভাবনা করা চাই। যদি আপন দ্বীন ও চরিত্রের ব্যাপারে সে সন্তুষ্ট হয় তাহলে তাকে গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় তাকে পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা, সঙ্গীর মাধ্যমে মত ও পথ পরিবর্তন হয়। আর অসৎ সঙ্গী পথভ্রষ্ট করে।
আবু মুসা আশআরি বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, 'সৎ ও অসৎ বন্ধুর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কামারের ন্যায়। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে একটু আতর লাগিয়ে দেবে, অথবা তুমি তার কাছ থেকে আতর ক্রয় করবে, অথবা তুমি তার কাছে আতরের ঘ্রাণ পাবে। আর কামার হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো তার কাছ থেকে খারাপ গন্ধ পাবে।' (বোখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'এবং শয়তান যার সাথী হয় সে হলো নিকৃষ্টতর সাথী।' (সূরা নিসা : ৩৮)
মানুষ যেমন বাঘ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে ঠিক তেমনি বুদ্ধিমান লোকেরা সব সময় খারাপ ও অসৎ লোকদের থেকে দূরে অবস্থান করে। কেননা খারাপ ও অসৎ লোকদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।
শুধু তাই নয়, অসৎ ও মন্দলোকেরা এমন এক হতভাগার দল, যাদের সাথে উঠাবসাকারীরাও হতভাগায় পরিণত হয়।
আর সেদিন যালিম নিজের হাত দু’টো কামড়িয়ে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোন পথ অবলম্বন করতাম’! ‘হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’। ‘অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক’। (সূরা ফুরকান : ২৭-২৯)
লুকমান আ. তার সন্তানকে উপদেশ দিয়ে বলেন, প্রিয় বৎস! উলামায়ে কিরামের সাথে উঠাবসা করো এবং তাদের সঙ্গ অবলম্বনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। কেননা আল্লাহ তাআলা হেকমতের নূর দ্বারা অন্তর সমূহকে সজীব করেন যেমন সজীব করেন আকাশের বৃষ্টি দ্বারা মৃত যমীনকে।
তিনি আরো বলেন, তুমি তাদের সঙ্গ দেওয়ার সময় হয়তো আল্লাহর রহমত তাদেরকে স্পর্শ করবে, আর তাদের সাথে তোমাকেও তা স্পর্শ করবে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, 'দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে।
তিনি বলেছেন, মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।'
নবীজি আরও বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসল, তাঁর জন্যই কাউকে ঘৃণা করল, তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে দান করল এবং তা থেকে বিরত থাকল তবে নিঃসন্দেহে সে নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।'
৩টি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। গুণ তিনটি হল-
১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ
২.বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং
৩. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো যে, সব ধরনের লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এ জন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি।